কোন ধরনের টায়ার ব্যবহার করবেন,কি কি দেখে টায়ার কিনবেন,কেমন টায়ার আপনার গাড়ির জন্য উপযুক্ত?

কোন ধরনের টায়ার ব্যবহার করবেন,কি কি দেখে টায়ার কিনবেন,কেমন টায়ার আপনার গাড়ির জন্য উপযুক্ত? 

আজকে আলোচনা করব গাড়ির টায়ার নিয়ে।সাথে টায়ার কেনার সময় আমরা যে জিনিসগুলো খেয়াল না করে মস্ত বড় ভুল করি সে বিষয়গুলো নিয়েও আলোকপাত করব।কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। 

প্রথমেই খুব সহজে বুঝানোর চেষ্টা করব যে টায়ারের সাইডওয়ালে যে গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকে আর আমরা বেশির ভাগ মানুষ না বুঝেই এড়িয়ে যাই সেই বিষয়টি নিয়ে। আচ্ছা উদাহরণ হিসেবে একটা অতি পরিচিত টায়ার এর সাইড ওয়াল এর লেখা ধরে নেই- 
P 195/65R15 91V M+S

কথাগুলোর মানে কি আসলে। এখানে আগেই বলে নেই আমি যে ক্যালকুলেশনটি করছি এটি আসলে Metric Measurements, যা বেশির ভাগ টায়ারের বেলায় প্রযোজ্য।

প্রথমেই আসি প্রথম অক্ষর P দ্বারা কি বুঝানো হয়ছে! P দিয়ে আসলে Passenger টায়ার বুঝানো হয়। টায়ারের এই লেখার সামনে এরকম আরও কিছু অক্ষর থাকে যেমন-
LT- Light Truck
ST- Special Trailer 
ML- Mining And Logging 
T- Truck 
MH- Mobile Home 
আর যদি সামনে কিছু লেখা না থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে ইহা Passenger টায়ার। 

Tire Width: এর পরে আসে 195, এই 195 দিয়ে আসলে টায়ারের দুই সাইড ওয়ালের মাঝের দুরত্ব বুঝানো হয়। অর্থাৎ সহজ ভাষায় টায়ারের প্রস্থ। এখানে 195 মানে হচ্ছে টায়ারের দুই সাউড ওয়ালের মাঝের দুরত্ব হবে 195 মিলিমিটার। আরও সহজে টায়ারের যে অংশটি মাটির সাথে লেগে থাকে তার সেটি 195 মিলিমিটার। 

Aspect Ratio: এরপরে আসে 65, এটি আসলে একটি পারসেন্ট। যাকে বলা হয় Aspect Ratio। প্রশ্ন হলো কিসের পারসেন্ট? এটি আসলে সাইডওয়াল এর প্রস্থ। অর্থাৎ রিম এর ঠিক উপরে থেকে শুরু করে সাইড ওয়াল এর শেষ ভাগ পর্যন্ত দুরত্ব।
আরো সহজে টায়ারের এই অংশটি মাটিতে লাগে না।আরেকটা কনফিউশান এটি যদি পারসেন্ট নাম্বার হয় তাহলে দুরত্ব কিভাবে? ওকে আবার আসি। এটি আসলে প্রথমে যে নাম্বারটি বললাম-195, এই নাম্বারের 65%। এখন তাহলে আপনি নিজেই হিসাব করুন আপনার সাইডওয়ালের প্রস্থ কত হবে! এখানে সেটা হচ্ছে ১২৬.৭৫ মিলিমিটার। 

Constrction : এইবার আসে R যার ফুল মানে Radial Construction। আমার যে টায়ার গুলো ব্যবহার করি তা অনেকগুলো স্তর নিয়ে তৈরি হয় যেগুলো Ply বলে। এই Ply গুলো Radial Construction এর বেলায় দুই সাইড ওয়ালের মাঝে লম্বালম্বি ৯০ ডিগ্রি কোণে থাকে। তাই একে R অর্থাৎ Radial construction বলা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ গাড়িতে এই Radial Construction ব্যবহার করা হয়। আরো এক ধরনের Constitution আছে D মানে Diagonal Bias Construction যা এক রকম ফেমাসই বলা চলে। এই Construction এ সাধারণত Ply গুলোর স্তরের কোণ থাকে আলাদা বা ইহা আড়া-আড়ি ভাবে থাকে। 

Rim Diameter: এটি আমরা মোটামোটি সবাই জানি, এটি হলো রিম এর সাইজ। এই চাকায় এই 15 মানে এখানে আপনি 15 ইঞ্চির বাইরে কেন রিম ব্যবহার করতে পারবেন না। 

লোড ইনডেক্স& স্পিড রেটিংঃ এখানে 91 দিয়ে মূলত লোড এর ব্যাপারটি বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ টায়ারটি স্বাভাবিকভাবে কতটুকু সর্বোচ্চ লোড নিতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে বলা আছে। মনে রাখবেন এই লোডে কিন্তু শুধু আপনার আর আপনার জিনিসপত্রের হিসাব করলে হবে না। পুরো গাড়ির হিসাব করতে হবে। আপনি সবসময় আপনার রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী লোড বা তার চেয়ে বেশি লোড ইনডেক্স এর টায়ার নিয়ে পারেন তবে কম যেনো না হয়। ছবিতে লোড ইনডেক্স এর চার্ট দেয়া হবে। 

এইবার V দিয়ে আসলে স্পিড রেটিং বুঝানো হয়, যার মানে আপনি সবচেয়ে বেশি কত গতিতে আপনার গাড়ির চাকাটি গড়াতে পারবেন সে হিসাব। দেখুন এর চেয়ে বেশি গতিতে চালালে বা স্পিড রেটিং না মেনে চালানো যাবে না এমন না, কিন্তু টায়ার এর মেয়াদ অনেক অনেক কমে যাবে। Ply গুলো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি নিশ্চয়ই কম স্পিড রেটিং এর টায়ার নিয়ে রেস করতে যাবেন না? আবার এতে করে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।সো সবসময় রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী স্পিড রেটিং বা এর চেয়ে বেশি রেটিং এর টায়ার কিনুন। এই চার্টটিরও ছবিতে দেয়া হবে।যদিও অনেক টায়ারেই এই দুইটি জিনিস অর্থাৎ ম্যাক্স লোড আর স্পিড লেখা থাকে।

M+S দ্বারা মূলত Mud And Snow বোঝানো হয়েছে। সহজ ভাষায় একে অল সিজন টায়ার বলা যায়। এটি যেমন প্রচন্ড রকম শীতের দিনেও খুব ভালো কাজ করে, ঠিক একইভাবে অনেক গরমের দিনেও খুব ভালো কাজ করে। 

Max Cold Pressure: দেখবেন আপনার টায়ারে হাওয়ার ম্যাক্স প্রেসার লেখা আছে, এটি আসলে সকাল বেলায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা ঠান্ডা তাপমাত্রায় মাপা প্রেসার, যা ম্যাক্স কতটুকু দেয়া যাবে তা লেখা থাকে। তার মানে এই না যে আপনি হাওয়া ম্যাক্স দিবেন। আপনার Manufacturer Recommendation অনুযায়ী হাওয়া দিলেই হবে(কিছু কিছু Criteria ২-৩ PSI বা কিছু বেশি এদিক-ওদিক হয়)। 

Tread wear: কিছু কিছু টায়ারে ট্রেড ওয়ার লেখা আছে;এই নাম্বার যত বেশি হবে, টায়ারের লাইফ তত এক্সট্যান্ড হবে। যেমন একটি টায়ারে লেখা আছে Tread Wear 400 যার মানে নরমাল এর চার গুন বেশি হবে এর লাইফ টাইম।এইভাবেই Ply গুলো ডিজাইন করা। এখানে আবার টায়ার Manufacturer অনুযায়ী ট্রেডওয়ার ভিন্ন হয়। সব কেম্পানির জন্য এক না।

Traction Grade: টায়ারের গ্রিপ করার ক্ষমতা বুঝানোর জন্য এই গ্রেড ব্যবহার করা হয়। হাইয়েস্ট গ্রেড AA তারপর পর্যায়ক্রমে A,B,C। এখানে সবচেয়ে বেশি গ্রিপ করার ক্ষমতা AA এর আর সবচেয়ে কম C এর। তবে সবচেয়ে বেশি গাড়িতে A গ্রেড ব্যবহার করা হয়। 

Temperature Grade: A,B এবং C এর তিন গ্রেডে এটি বিভক্ত।
ল্যাব এ টেস্ট করার পর পাওয়া যায় যে সবচেয়ে ভালোভাবে এবং দ্রুত হিট ছেড়ে দিতে পারে A গ্রেড এর টায়ার। তারপরের B, এরপরে C। তার মানে এই না যে C গ্রেড আনসেফ। 

এই গেলো বেসিক কথা বার্তা যা কিছু জেনে আসলে টায়ার কিনা যায়। টায়ারে আরো কিছু বিষয় আছে,যেগুলো কম্লেক্স। তবে টায়ার কেনার সময় স্বাভাবিকভাবে সকলের এই বিষয়গুলোর উপরে নজর দেয়া উচিত। আপনি সবসময় আপনার Manufacturer Recommendations Grade অনুযায়ী বা এর চেয়ে ভালো গ্রেড(উপরে উল্লেখিত) এর টায়ার ক্রয় করবেন। তবে কখনোই এর চেয়ে নিচে যাওয়া উচিত হবে না। 
★★★মনে রাখবেন সেফটি ফার্স্ট। 
আজ বলতে বলতে অনেক কিছু বললাম, টায়ারের প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত না-হয় আরেকদিন আলোচনা করা হবে।

Written&Credit:#অমিয়_রহমান 
#Stay_Home
#Stay_Safe
#Road_Safety

উপকারী মনে হলে নির্দ্বিধায় শেয়ার করুন।
Post CarHub Bd Facebook page: 


Post a Comment

0 Comments